আম আঁটির ভেঁপু গল্পটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস পথের পাঁচালী-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে গ্রামের দরিদ্র এক ব্রাহ্মণ পরিবারের দৈনন্দিন জীবন, শিশুদের সারল্য, প্রকৃতির সৌন্দর্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েন অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই পোস্টে আম আঁটির ভেঁপু গল্পের প্রশ্ন উত্তর (অনুধাবন) লিখে দিলাম।
আম আঁটির ভেঁপু গল্পের প্রশ্ন উত্তর
১। আম আঁটির ভেঁপু গল্পে কি ফুটে উঠেছে?
উত্তর: “আমআঁটির ভেঁপু” গল্পে গ্রামীণ জীবনের সরলতা, দারিদ্র্য, শিশুদের স্বপ্ন ও কল্পনা, এবং পারিবারিক সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। গল্পে অপু ও দুর্গার খেলাধুলা, চুরি করে আম সংগ্রহ করা, এবং তাদের মা-বাবার সংগ্রামী জীবনচিত্র অঙ্কিত হয়েছে। এটি শিশুদের মনের সরলতা ও বড় হওয়ার সংগ্রামকে চিত্রিত করে।
২। আম আঁটির ভেঁপু গল্পের মূল সুর কি?
উত্তর: গল্পের মূল সুর হলো দারিদ্র্যের মধ্যে শিশুদের আনন্দ ও কল্পনার জগৎ। অপু ও দুর্গার খেলাধুলা, চুরি করে আম সংগ্রহ করা, এবং তাদের ছোট ছোট স্বপ্ন গল্পের মূল সুর তৈরি করে। এটি দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও শিশুদের মনের আনন্দ ও সৃজনশীলতাকে ফুটিয়ে তোলে।
৩। আম আঁটির ভেঁপু গল্পটি শিশু-কিশোরদের মনে কিসের অনুপ্রেরণা যোগায়?
উত্তর: গল্পটি শিশু-কিশোরদের মনে কল্পনা, সৃজনশীলতা, এবং সহজ-সরল আনন্দের অনুপ্রেরণা যোগায়। অপু ও দুর্গার খেলাধুলা ও তাদের ছোট ছোট স্বপ্ন দেখায় যে দারিদ্র্যের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এটি শিশুদের মনে স্বপ্ন দেখার সাহস ও সৃজনশীলতা জাগিয়ে তোলে।
৪। বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে হরিহর রাজি হলো না কেন?
উত্তর: হরিহর বামুন হিসেবে বাস করার প্রস্তাবে রাজি হলো না কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে লোকলজ্জা ও সম্মানের প্রশ্ন উঠবে। তিনি আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ঋণের দায়ে জর্জরিত ছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি সমাজের চোখে নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন।
৫। আম আঁটির ভেঁপু গল্পের সমাপ্তিতে কোন বিষয়টি ব্যক্ত হয়েছে?
উত্তর: গল্পের সমাপ্তিতে ব্যক্ত হয়েছে যে দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্যেও শিশুদের মনের আনন্দ ও কল্পনা অটুট থাকে। অপু ও দুর্গার খেলাধুলা ও তাদের ছোট ছোট স্বপ্ন দেখায় যে জীবনযুদ্ধের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এটি জীবনের কঠিন বাস্তবতার মধ্যে আশা ও আনন্দের বার্তা দেয়।
৬। গল্পটি আম আঁটির ভেঁপু নামকরণ করা হয়েছে কেন?
উত্তর: গল্পটি “আমআঁটির ভেঁপু” নামকরণ করা হয়েছে কারণ গল্পে অপু ও দুর্গার খেলার একটি প্রধান উপকরণ ছিল টিনের ভেঁপু। এই ভেঁপুটি তাদের খেলাধুলা ও কল্পনার জগতের প্রতীক। গল্পে আম সংগ্রহ ও জারানোর প্রক্রিয়াও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা গল্পের নামকরণে প্রতিফলিত হয়েছে।
৭। অপু সকালবেলা কী করছিল?
উত্তর: অপু সকালবেলা রোয়াকে বসে তার ভাঙা টিনের বাক্সের জিনিসপত্র নিয়ে খেলছিল। তার খেলনার মধ্যে ছিল কাঠের ঘোড়া, টিনের ভেঁপু, কড়ি, পিস্তল এবং শুকনো নাটা ফল। সে গঙ্গা-যমুনা খেলার জন্য খাপরার টুকরো ব্যবহার করছিল। খেলতে খেলতে সে বাঁশি বাজিয়ে এবং ঘোড়া নেড়ে সময় কাটাচ্ছিল।
৮। দুর্গা অপুকে কী জন্য ডাকল?
উত্তর: দুর্গা অপুকে ডাকল চুরি করা কাচা আম জারানোর জন্য তেল ও নুন আনতে। সে পটলিদের বাগান থেকে আম সংগ্রহ করেছিল এবং মাকে লুকিয়ে এই কাজ করতে চেয়েছিল। অপুকে সাহায্য করার জন্য সে তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল যেন মা টের না পায়।
৯। অপু ও দুর্গার আম খাওয়ার পর কী ঘটল?
উত্তর: আম খাওয়ার পর তাদের মুখে নুনের গুঁড়ো লেগে থাকায় মা সন্দেহ করলেন। দুর্গা দ্রুত অপুকে মুখ মুছতে বলল এবং আমের মালা জঙ্গলে ফেলে দিল। মা জিজ্ঞাসা করলে অপু ভয়ে সত্য গোপন করল, কিন্তু দুর্গা নিরীহ ভান করে কথা চাপা দিল।
১০। সর্বজয়ার দৈনন্দিন জীবন কেমন?
উত্তর: সর্বজয়া সংসারের কাজে ব্যস্ত, ক্ষার কাচতে যাওয়া, রান্না করা এবং সন্তানদের দেখভাল করা তার নিত্যদিনের রুটিন। তিনি ঋণের চাপে থাকেন এবং স্বামীর আয়ের উপর নির্ভরশীল। সন্তানদের অবাধ্যতা ও চুরির প্রবণতা তার মানসিক চাপ বাড়ায়।
১১। হরিহরের চাকরির অবস্থা কী?
উত্তর: হরিহর গ্রামের অন্নদা রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করে। তার বেতন অনিয়মিত এবং ঋণের দায়ে জর্জরিত। এক সদগোপ পরিবার তাকে মন্ত্র দানের প্রস্তাব দেয়, যা থেকে বাড়তি আয়ের আশা করে। তবে আর্থিক অনিশ্চয়তা তাকে চাপে রাখে।
১২। দুর্গার চরিত্রের বর্ণনা কর।
উত্তর: দুর্গা চালাক, সৃজনশীল এবং সাহসী। সে প্রায়ই চুরি করে ফল সংগ্রহ করে, ভাই অপুকে সহযোগিতা করে এবং মাকে ফাঁকি দেওয়ার কৌশল জানে। তার মধ্যে দায়িত্ববোধের অভাব থাকলেও সে অপুকে স্নেহ করে এবং প্রাণোচ্ছল।
১৩। অপু ও দুর্গার সম্পর্ক কেমন?
উত্তর: তাদের সম্পর্ক ভাইবোনের স্নেহ ও সহযোগিতার। দুর্গা অপুকে নির্দেশ দেয়, আর অপু তাকে অনুসরণ করে। তারা একসাথে চুরি করে, খেলাধুলা করে এবং মাকে লুকিয়ে কাজ করে। দুর্গা অপুকে স্নেহ করে, কিন্তু তার ভুল ধরতেও পিছপা হয় না।
১৪। হরিহরের বাড়ির অবস্থা কেমন?
উত্তর: হরিহরের বাড়িটি জীর্ণ এবং মেরামতের অভাবে ভাঙাচোরা। রোয়াক ভাঙা, দরজা-জানালা নারকেলের দড়ি দিয়ে বাঁধা। বাড়ির চারপাশে জঙ্গল এবং নিকটে কোনো প্রতিবেশী নেই। এই অবস্থা তাদের দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বকে ফুটিয়ে তোলে।
১৫। অপু কেন মায়ের সামনে সত্য গোপন করল?
উত্তর: অপু মায়ের ভয়ে সত্য গোপন করল। সে জানত যে মা যদি তাদের চুরির কথা জানতে পারেন, তবে তাদের শাস্তি পেতে হবে। তাই সে দুর্গার নির্দেশে মাকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করল।
১৬। হরিহর কেন মন্ত্র দানের প্রস্তাব নিয়ে চিন্তিত?
উত্তর: হরিহর মন্ত্র দানের প্রস্তাব নিয়ে চিন্তিত কারণ তার আর্থিক অবস্থা খারাপ। তিনি ভাবছেন যে এই কাজ থেকে বাড়তি আয় হতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি লোকলজ্জা ও সম্মানের বিষয়েও সচেতন। তাই তিনি সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন।
১৭। দুর্গা কেন কাঁঠালতলায় দাঁড়িয়ে ছিল?
উত্তর: দুর্গা কাঁঠালতলায় দাঁড়িয়ে ছিল কারণ সে মাকে লুকিয়ে বাড়িতে ঢুকতে চাইছিল। সে রোয়াকে দাঁড়াতে পারছিল না, কারণ রোদে পা পুড়ে যাচ্ছিল। তাই সে অপেক্ষা করছিল যে কখন মা ঘুমোলে সে চুপি চুপি বাড়িতে ঢুকবে।
১৮। দুর্গা কেন অপুকে লক্ষ্মীছাড়া বাঁদর বলল?
উত্তর: দুর্গা অপুকে লক্ষ্মীছাড়া বাঁদর বলল কারণ অপু আম খাওয়ার পর মুখে নুনের গুঁড়ো লেগে থাকায় মা টের পেতে পারেন। সে অপুকে সতর্ক করতে চেয়েছিল এবং তার অসাবধানতার জন্য তাকে বকা দিল।
১৯। দুর্গা কেন শুকনো রড়া ফলের বিচি সংগ্রহ করল?
উত্তর: দুর্গা শুকনো রড়া ফলের বিচি সংগ্রহ করল কারণ সেগুলো তার কাছে মূল্যবান ছিল। সে অপুকে কিছু দিতে চেয়েছিল এবং বাকিগুলো পুতুলের বাক্সে রাখতে চেয়েছিল। এটি তার সৃজনশীলতা ও ভাইয়ের প্রতি স্নেহের প্রকাশ।
২০। হরিহর কেন মজুমদার মহাশয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইলেন?
উত্তর: হরিহর মজুমদার মহাশয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে চাইলেন কারণ তিনি মন্ত্র দানের প্রস্তাব নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি চাইছিলেন যে একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
২১। দুর্গা কেন নারকোলের মালাটা অপুকে দিল?
উত্তর: দুর্গা নারকোলের মালাটা অপুকে দিল কারণ সে তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল। অপু তেল ও নুন আনতে যাচ্ছিল এবং মালাটা ব্যবহার করে সেগুলো আনতে পারবে বলে দুর্গা ভেবেছিল।
২২। হরিহর কেন সদগোপ পরিবারের প্রস্তাব নিয়ে চিন্তিত?
উত্তর: হরিহর সদগোপ পরিবারের প্রস্তাব নিয়ে চিন্তিত কারণ তিনি ভাবছেন যে এই কাজ থেকে বাড়তি আয় হতে পারে, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি লোকলজ্জা ও সম্মানের বিষয়েও সচেতন। তাই তিনি সতর্কভাবে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন।