আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার মূলভাব, ব্যাখ্যা ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

“আমি কোনো আগন্তুক নই” কবিতাটি বাংলাদেশের কবি আহসান হাবীবের একটি পরিচিত কবিতা, যেখানে কবি তাঁর জন্মভূমির সঙ্গে অটুট সম্পর্ক ও পরিচিতির কথা বলেন। এই পোস্টে আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা লিখে দিলাম।

আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার মূলভাব

“আমি কোনো আগন্তুক নই” কবিতায় কবি জন্মভূমির সঙ্গে তাঁর অটুট সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। এখানে গ্রামীণ জনপদের জীবনযাত্রা এবং প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর নিবিড় বন্ধন প্রকাশিত হয়েছে। কবি তাঁর দৈনন্দিন জীবনের নানা দিক, যেমন মাঠ, ঘাট, পথ এবং প্রান্তরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে অনুভব করেন যে, এই সবই তাঁর আত্মার অঙ্গ। গ্রামের ধানক্ষেত, নদীর কিনারা, এবং প্রকৃতির অন্য সব অনুষঙ্গ কবির হৃদয়ে গভীরভাবে গেঁথে আছে। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, “আমি কোনো আগন্তুক নই”, কারণ তাঁর জন্মভূমির প্রতিটি উপাদান আকাশ, ফুল, পাখি, জোনাকি, পুকুর সবকিছুর সঙ্গে তিনি পরিচিত। এরা তাঁকে চেনে এবং তিনি এদের কাছে আপন। কবির প্রিয় গ্রামীণ মানুষ, যেমন কদম আলী ও জমিলার মা, তাঁকে স্বজনের মতো মানেন। এই সম্পর্ক কবিকে আরও গভীরভাবে প্রান্তরের সঙ্গে যুক্ত করে। কবি জন্মভূমিতে শিকড় গেড়ে, নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পান। এই কবিতায় ফুটে উঠেছে যে, জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং ঐক্যবদ্ধতার অনুভূতি মানুষের মধ্যে কিভাবে গভীর ভাবে কাজ করে। এটি আমাদের শিখায় যে, যখন আমরা আমাদের শিকড়ে মিশে যাই, তখনই আমরা দেশকে সত্যিকার অর্থে আপন করে পাই।

আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার ব্যাখ্যা

“আসমানের তারা সাক্ষী
সাক্ষী এই জমিনের ফুল,
এই নিশিরাইত বাঁশবাগান বিস্তর জোনাকি সাক্ষী”

কবি বলেন, আকাশের তারা, জমিনের ফুল আর গভীর রাতের বাঁশবাগানের জোনাকি সবাই সাক্ষী যে, তিনি এই দেশেরই মানুষ। তারা দেখেছে তাঁর শৈশব, তাঁর বেড়ে ওঠা এই মাটিতেই। তাই তিনি কোনো অপরিচিত নন। প্রকৃতির প্রতিটি উপাদান তাঁর চেনা, তাঁর আপনজনের মতো। এই আকাশ, ফুল, আর জোনাকি যেন বলে কবি এই মাটিরই সন্তান, এই দেশেরই আত্মীয়।


“সাক্ষী এই জারুল জামরুল, সাক্ষী
পুবের পুকুর, তার ঝাকড়া ডুমুরের ডালে স্থির দৃষ্টি
মাছরাঙা আমাকে চেনে”

কবি বলেন, গ্রামের জারুল আর জামরুল গাছ, পুব দিকের পুকুর এবং তার ডুমুর গাছে বসে থাকা মাছরাঙা সবাই তাঁকে চেনে। এই গাছ, পুকুর আর পাখিরা তাঁর জীবনের পরিচিত অংশ। এগুলো তাঁর শৈশব, তাঁর পরিবেশের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই তারা সাক্ষী যে কবি এই মাটিরই মানুষ, কোনো অচেনা নন।


আমি কোনো অভ্যাগত নই
খোদার কসম আমি ভিনদেশি পথিক নই
আমি কোনো আগন্তুক নই।

কবি শপথ করে বলেন, তিনি কোনো অভ্যাগত (অপরিচিত) বা ভিনদেশি পথিক নন। তিনি এই দেশেরই মানুষ, এই মাটিরই সন্তান। তাঁর জীবন এই ভূমির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তাই তিনি বিদেশি নয়, বরং নিজের ঘরের মানুষ। কবির কথায় নিজের দেশ ও জন্মভূমির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও আত্মপরিচয়ের গর্ব প্রকাশ পেয়েছে।


আমি কোনো আগন্তুক নই, আমি
ছিলাম এখানে,আমি স্বাপ্নিক নিয়মে
এখানেই থাকি আর
এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা-
সারা দেশে।

কবি বলেন, তিনি কোনো আগন্তুক নন, তিনি সবসময়ই এই মাটিতে ছিলেন। স্বপ্নের মতো আপন নিয়মে তিনি এখানেই থাকেন, এখানেই বেঁচে আছেন। তাঁর অস্তিত্ব এই দেশ, এই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তাই এখানে থাকা মানেই সর্বত্র থাকা পুরো দেশজুড়েই তাঁর উপস্থিতি। এতে বোঝা যায়, কবির জীবন ও দেশ একে অপরের থেকে আলাদা নয়; তাঁর শিকড় গভীরভাবে এই ভূমিতেই জড়িত।


“আমি কোনো আগন্তুক নই। এই
খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের
পাখিরা আমাকে চেনে
তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই।”

কবি বলেন, তিনি এই দেশেরই মানুষ এই খর রৌদ্র, জলমাখা বাতাস, মেঘ আর বিকেলের ক্লান্ত পাখিরা তাঁকে চেনে। প্রকৃতির এই প্রতিটি উপাদান তাঁর পরিচিত, তাঁর জীবনের অংশ। তাই তারা জানে, কবি এখানে অপরিচিত বা অনাত্মীয় নন। তিনি এই ভূমিরই সন্তান, এই প্রকৃতির সঙ্গেই তাঁর আত্মীয়তা ও ভালোবাসার বন্ধন গড়ে উঠেছে।


“কার্তিকের ধানের মঞ্জরী সাক্ষী
সাক্ষী তার চিরোল পাতার
টলমল শিশির সাক্ষী জ্যোৎস্নার চাদরে ঢাকা
নিশিন্দার ছায়া”

কবি বলেন, কার্তিক মাসের ধানের মঞ্জরী, তার চিরোল পাতার ওপর ঝরঝরে শিশিরবিন্দু, আর জ্যোৎস্নার আলোয় ঢাকা নিশিন্দা গাছের ছায়া সবই সাক্ষী যে তিনি এই মাটিরই মানুষ। এই গ্রামীণ দৃশ্যগুলো তাঁর কাছে খুব পরিচিত ও আপন। এগুলো তাঁর শৈশব, তাঁর জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। তাই তিনি কোনো আগন্তুক নন; গ্রামের এই প্রকৃতি নিজেই প্রমাণ দেয় যে তিনি এই দেশ, এই প্রকৃতিরই অংশ।


“অকাল বার্ধক্যে নত কদম আলী
তার ক্লান্ত চোখের আঁধার-
আমি চিনি, আমি তার চিরচেনা স্বজন একজন। আমি
জমিলার মা’র
শূন্য খাঁ খাঁ রান্নাঘর শুকনো থালা সব চিনি
সে আমাকে চেনে।”

কবি বলেন, অকাল বার্ধক্যে নুয়ে পড়া কদম আলী নামের পরিশ্রমী মানুষটিকে তিনি চেনেন তার ক্লান্ত চোখের দৃষ্টি তাঁর খুবই পরিচিত। কবি জানেন, কদম আলী তাঁরই মতো এই মাটির মানুষ। আবার তিনি জানেন জমিলার মায়ের শূন্য রান্নাঘর, যেখানে অভাবের কারণে থালা-বাসন শুকনো পড়ে থাকে। এই দরিদ্র মানুষগুলোও কবিকে চেনে, কারণ তিনি তাদেরই একজন, তাদের জীবনেরই অংশ। এভাবে কবি বোঝাতে চান, তিনি এই দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত, তাই তিনি কোনো আগন্তুক নন।


“হাত রাখো বৈঠায় লাঙলে, দেখো
আমার হাতের স্পর্শ লেগে আছে কেমন গভীর। দেখো
মাটিতে আমার গন্ধ, আমার শরীরে
লেগে আছে এই স্নিগ্ধ মাটির সুবাস।”

কবি বলেন, বৈঠায় লাঙল ধরলে দেখা যাবে তাঁর হাতের ছোঁয়া মাটিতে কত গভীর ছাপ রেখেছে। মাটির সঙ্গে তাঁর শরীর ও শ্রম এতটা মিশে গেছে যে, তাঁর গায়ে লেগে আছে সেই মাটির সুবাস। অর্থাৎ তিনি পুরোপুরি এই ভূমির সঙ্গে যুক্ত, এই মাটির সন্তান। তাঁর জীবন, শরীর, হাত সবই এই গ্রামীণ মাটির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।


“আমাকে বিশ্বাস করো, আমি কোনো আগন্তুক নই ,
দু’পাশে ধানের খেত
সরু পথ
সামনে ধু ধু নদীর কিনার
আমার অস্তিত্বে গাঁথা। আমি এই উধাও নদীর
মুগ্ধ এক অবোধ বালক।”

কবি অনুরোধ করছেন, তাঁকে বিশ্বাস করতে, কারণ তিনি কোনো আগন্তুক নন। তাঁর জীবন এই গ্রামীণ দৃশ্যের সঙ্গে মিশে গেছে দু’পাশে ধানের খেত, সরু পথ, সামনে বিস্তৃত নদীর কিনার। এই সবই তাঁর অস্তিত্বে গেঁথে আছে। কবি নিজেকে সেই নদীর ধারে মুগ্ধ এক শিশুর মতো বর্ণনা করছেন, যিনি প্রকৃতির সঙ্গে খেলাধুলা করে এবং তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ।

আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

১। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কার চিরচেনা স্বজন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কদম আলীর চিরচেনা স্বজন।

২। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় আসমানের তারা কার সাক্ষী?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় আসমানের তারা কবির সাক্ষী।

৩। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি ‘এখানে থাকা মানে’ কোথায় থাকা বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি ‘এখানে থাকা মানে সারা দেশে থাকা’ বুঝিয়েছেন।

৪। কবি আহসান হাবীব কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: কবি আহসান হাবীব ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

৫। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির হাতের স্পর্শ কোথায় লেগে আছে?
উত্তর: কবির হাতের স্পর্শ লেগে আছে বৈঠায় ও লাঙলে।

৬। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় জ্যোত্মার চাদরে কী ঢাকা?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় জ্যোৎস্নার চাদরে নিশিন্দার ছায়া ঢাকা।

৭। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কার নামে শপথ নিয়েছেন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি খোদার নামে শপথ নিয়েছেন।

৮। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কে কোনো অভ্যাগত নন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কোনো অভ্যাগত নন।

৯। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় মাটিতে কার গন্ধ পাওয়া যাবে?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় মাটিতে কবির গন্ধ পাওয়া যাবে।

১০। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কদম আলী কিসে নত?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কদম আলী অকাল বার্ধক্যে নত।

১১। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কীরূপ নদীর মুগ্ধ এক অবোধ বালক?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি ধু ধু নদীর মুগ্ধ এক অবোধ বালক।

১২। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কার চোখ ক্লান্ত?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কদম আলীর চোখ ক্লান্ত।

১৩। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: আহসান হাবীবের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ‘রাত্রিশেষ’।

১৪। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বাঁশবাগানে বিস্তর কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় বাঁশবাগানে বিস্তর জোনাকির কথা বলা হয়েছে।

১৫। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় মাছরাঙা কাকে চেনে?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় মাছরাঙা কবিকে চেনে।

১৬। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় অকাল বার্ধক্যে নত কে?
উত্তর: অকাল বার্ধক্যে নত কবির পরিচিত কদম আলী।

১৭। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কত সালে কবি আহসান হাবীব মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: ১৯৮৫ সালে কবি আহসান হাবীব মৃত্যুবরণ করেন।

১৮। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় ‘তার ক্লান্ত চোখের আঁধার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় উল্লিখিত ‘তার ক্লান্ত চোখের আঁধার’ বলতে কদম আলীর কথা বলা হয়েছে।

১৯। ‘নিশিরাইত’ অর্থ কী?
উত্তর: ‘নিশিরাইত’ অর্থ গভীর রাত।

২০। আহসান হাবীবের কবিতায় কোন দিকটি বিশিষ্ট ব্যঞ্জনা দান করেছে?
উত্তর: আহসান হাবীবের কবিতায় গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদের দিকটি বিশিষ্ট ব্যঞ্জনা দান করেছে।

২১। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কোন দেশি পথিক নন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি ভিনদেশি পথিক নন।

২২। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কদম আলীর নাম কোথায় উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কদম আলীর নাম উল্লেখ করেছেন।

২৩। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি কোন জায়গায় বসতি গড়েছেন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবি আশায় বসতি গড়েছেন।

২৪। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির চোখের ক্লান্তি কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির চোখের ক্লান্তি কদম আলীর মধ্যে দেখা যায়।

২৫। ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কদম আলীর প্রতি কবির অনুভূতি কী?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কদম আলীর প্রতি কবির অনুভূতি গভীর।

আরও পড়ুনঃ স্মৃতিস্তম্ভ কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা

আরও পড়ুনঃ বৃষ্টি কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা

Related Posts

Leave a Comment