জসীমউদ্দীনের “আমার বাড়ি” কবিতাটি গ্রামবাংলার সৌন্দর্য, অতিথিপরায়ণতা এবং নিখাদ ভালোবাসার এক অনবদ্য চিত্র আঁকে। কবি তাঁর বন্ধুকে বা প্রিয়জনকে “ভোমর” বলে সম্বোধন করে স্নেহ-ভরা আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই পোস্টে আমার বাড়ি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর লিখে দিলাম।
আমার বাড়ি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন
১। কবিতার নাম ‘আমার বাড়ি’ কেন রাখা হয়েছে?
উত্তর: কবির বাড়ি সম্পর্কে তিনি যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং তার বাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভালোবাসার পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরেছেন, তার প্রতিচ্ছবি এই শিরোনামে এসেছে। কবি তার প্রিয়জনকে তার সহজ, সুন্দর এবং আন্তরিক পরিবেশে স্বাগত জানাচ্ছেন।
২। ‘আমার বাড়ি যাইও ভোমর’ বাক্যে ‘ভোমর’ বলতে কী ঝোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ভোমর’ মানে মৌমাছি। এখানে ‘ভোমর’ শব্দটি ব্যবহার করে কবি তার প্রিয়জনকে আহ্বান জানিয়েছেন। এটি কবির প্রিয়জন বা বন্ধুর প্রতি মধুর সম্বোধন।
৩। ‘শালি ধানের চিঁড়েতে’ কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘শালি ধানের চিঁড়েতে’ বোঝানো হয়েছে স্নেহপূর্ণ ভোজ। শালি ধান হেমন্তকালে জন্মে এবং এটি তাজা ও সুস্বাদু, যা অতিথিকে পরিবেশন করা হয়। কবি তার অতিথিকে এই ধরনের খাওয়া দেওয়ার মাধ্যমে তার আন্তরিকতার প্রকাশ করছেন।
৪। ‘বিন্নি ধানের খই’ কেন উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তর: ‘বিন্নি ধানের খই’ বাঙালির পরিচিত একটি সুস্বাদু খাদ্য। এই শব্দের মাধ্যমে কবি তার বাড়ির সহজ এবং স্নেহপূর্ণ পরিবেশের চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে অতিথির জন্য এমন এক স্নেহময় খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে।
৫। ‘গামছা-বাঁধা দই’ মানে কি?
উত্তর: ‘গামছা-বাঁধা দই’ একটি গ্রাম্য খাবার যা ঘরে তৈরি হয়। এর সঙ্গেই গ্রামের সাধারণ জীবনযাত্রার পরিপূর্ণতা পাওয়া যায়। কবি এখানে স্নেহ-ভরা দইয়ের মাধ্যমে নিজের বাড়ির অতিথিপরায়ণতার ছবি আঁকছেন।
৬। ‘শুয়ো আঁচল পাতি’ বলতে কি বোঝায়?
উত্তর: ‘শুয়ো আঁচল পাতি’ মানে হচ্ছে, অতিথি যেন শান্তিতে বিশ্রাম নেন। এখানে কবি তাঁর প্রিয়জনকে বলছেন যে, তারা যেন তার বাড়িতে শুয়ে আছেন, যেখানে স্নিগ্ধ পরিবেশ এবং আরাম রয়েছে।
৭। ‘চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো’– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো’ এক প্রেমময় এবং মিষ্টি বাক্য। এখানে কবি তার প্রিয়জনকে প্রেমময়ভাবে সম্মান জানাচ্ছেন এবং তাদের মুখের সৌন্দর্যকে চাঁদের সাথে তুলনা করছেন।
৮। ‘গাই দোহনের শব্দ শুনি’ – এখানে কবি কী বোঝাচ্ছেন?
উত্তর: ‘গাই দোহনের শব্দ শুনি’ দ্বারা কবি গ্রামের প্রকৃতির কোলাহল, বিশেষত গাভীর দুধ দোহনের শব্দকে প্রকাশ করছেন। এটি গ্রামীণ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং কবির বাড়ির সাধারণ কিন্তু মধুর পরিবেশের চিত্র।
৯। ‘সারাটা দিন তোমায় লয়ে করব আমি খেলা’– ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: এখানে কবি তার প্রিয়জনকে দিনভর আনন্দে কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এটি স্নেহ, সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের এক অনন্য চিত্র, যেখানে কবি তার অতিথিকে পূর্ণ সুখ-শান্তি দিতে চান।
১০। ‘আমার বাড়ি যাইও ভোমর, এই বরাবর পথ’ – কবি কিভাবে পথ দেখিয়েছেন?
উত্তর: ‘আমার বাড়ি যাইও ভোমর, এই বরাবর পথ’ কবি তার প্রিয়জনকে পথ নির্দেশ করছেন, যেন সে সরাসরি তার বাড়ি আসে। কবি তার অতিথিকে স্নেহভরে আহ্বান জানিয়েছেন এবং পথ সহজ করে দিয়েছেন।
১১। ‘মৌরি ফুলের গন্ধ শুঁকে থামিও তব রথ’ – এই চরণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘মৌরি ফুলের গন্ধ শুঁকে থামিও তব রথ’ দিয়ে কবি বন্ধুকে বা প্রিয়জনকে জানাচ্ছেন, পথে তার বাড়ির আশেপাশে সৌরভময় গন্ধ থাকবে, যা তাকে যেন থামিয়ে রাখবে। এটি কবির বাড়ির শান্ত ও স্বর্গীয় পরিবেশের অভিব্যক্তি।
১২। ‘গাই দোহনের শব্দ শুনি’ থেকে গ্রামীণ জীবনযাত্রার কি পরিচয় মেলে?
উত্তর: ‘গাই দোহনের শব্দ শুনি’ গ্রামীণ জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ রুটিন। গাভীর দুধ দোহন সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় হয়, যা গ্রামাঞ্চলের এক প্রাকৃতিক এবং শান্ত দৃশ্য। এটি গ্রামের জীবনযাত্রার এক নিত্যসঙ্গী সুর।
১৩। কবি কেন তার প্রিয়জনকে ‘ভোমর’ বলে সম্বোধন করেছেন?
উত্তর: ‘ভোমর’ শব্দটি মৌমাছি বা প্রিয়জনকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে কবি তার প্রিয়জনকে ভালোবাসা ও মিষ্টি আবেগে ডাকছেন, যেন সে তার বাড়িতে এসে শান্তি ও স্নেহ পায়।
১৪। কবি ‘বিন্নি ধানের খই’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘বিন্নি ধানের খই’ একটি সুস্বাদু বাঙালি খাদ্য। এটি গ্রামের সাধারণ পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে খাবারগুলি সহজ এবং মনের শান্তি প্রদানকারী হয়। কবি তার প্রিয়জনকে এমনই স্নেহপূর্ণ পরিবেশে আহ্বান জানিয়েছেন।
১৫। ‘চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো’ কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘চাঁদমুখে তোর চাঁদের চুমো’ বাক্যটি এক প্রেমময় স্নেহের প্রকাশ। কবি তার প্রিয়জনের মুখের সৌন্দর্য চাঁদের সাথে তুলনা করেছেন, এবং চুমো দিয়ে তার ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে চেয়েছেন।
১৬। ‘আম-কাঁঠালের বনের ধারে’ কবি কী ধরনের দৃশ্য বর্ণনা করছেন?
উত্তর: ‘আম-কাঁঠালের বনের ধারে’ দ্বারা কবি প্রকৃতির এক মধুর দৃশ্য তুলে ধরছেন, যেখানে প্রচুর আম ও কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এই দৃশ্যের মাধ্যমে কবি তার বাড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধতা ফুটিয়ে তুলেছেন।
১৭। ‘কাজলা দিঘির কাজল জলে’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘কাজলা দিঘির কাজল জলে’ দিয়ে কবি গ্রামের দিঘির কালো জল এবং তার শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা বলেছেন। এখানে হাঁসগুলি নির্ভয়ে ভাসে, যা গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা এবং সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে।
১৮। ‘তারা ফুলের মালা গাঁথি’– কবি কেমন চিত্র আঁকেন?
উত্তর: ‘তারা ফুলের মালা গাঁথি’ বাক্যটি এক অত্যন্ত সুন্দর এবং রোমান্টিক দৃশ্য তৈরি করে। ফুলের মালা গাঁথার কাজ সাধারণত পবিত্রতা, সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কবি এখানেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাচ্ছেন।
১৯। কবি কেন ‘মৌরি ফুলের গন্ধ শুঁকে থামিও তব রথ’ বলেছেন?
উত্তর: ‘মৌরি ফুলের গন্ধ শুঁকে থামিও তব রথ’ দ্বারা কবি তার প্রিয়জনকে পথ চলতে চলতে থামিয়ে তার বাড়ির শান্ত পরিবেশের সৌন্দর্য অনুভব করতে বলছেন। মৌরি ফুলের গন্ধ যেন তার রথের গতির দিকে বিরতি আনে, এটি কবির বাড়ির সুগন্ধির কথা বলে।
২০। ‘আমার বাড়ি’ কবিতার মূলভাব সংক্ষেপে লেখ।
উত্তর: ‘আমার বাড়ি’ কবিতায় কবি স্নেহ, ভালোবাসা এবং শান্তি পূর্ণ পরিবেশের বার্তা দিয়েছেন। তিনি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যকে তুলে ধরে তার প্রিয়জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যেন তারা তার বাড়িতে এসে প্রকৃতির সৌন্দর্য ও আন্তরিক ভালোবাসা অনুভব করেন।