‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ পুনরায় বাংলায় ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব, যা তাঁর মাতৃভূমির প্রতি এক গভীর ভালোবাসার নিদর্শন। তিনি প্রকৃতির মাঝে মিশে যেতে চান। এই পোস্টে জীবনানন্দ দাশের আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা করে দিলাম।
Table of Contents
আবার আসিব ফিরে কবিতার মূলভাব
জীবনানন্দ দাশের “আবার আসিব ফিরে” কবিতার মূলভাব খুবই হৃদয়গ্রাহী এবং গভীর। কবি তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে অসীম ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। কবিতায় তিনি বাংলাদেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য—নদী, শস্যক্ষেত্র, এবং গ্রামীণ জীবনকে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে তুলে ধরেছেন। কবি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এখানে পাকা ধানের গন্ধ, শীতের কুয়াশা, শিমুলের ডালে বসে থাকা লক্ষ্মীপেঁচা এবং শিশুদের খেলার চিত্র তাঁর মনে আনন্দের সঞ্চার করে। এইসব দৃশ্য কবির কাছে জীবনের গভীরতা এবং আনন্দের প্রতীক। মৃত্যুর পরও তিনি বাংলায় ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, তিনি তার মাতৃভূমির প্রতি কতটা অঙ্গীকারবদ্ধ। কবি চায় যে, তিনি মানুষের রূপে, অথবা পাখির রূপে বাংলার প্রকৃতিতে ফিরে আসবেন। তাঁর কাছে বাংলাদেশ হলো সেরা দেশ, যেখানে তিনি সবসময় ফিরে যেতে চান। এটি সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের একটি অনুভূতি, যিনি কখনো তাঁর জন্মভূমিকে ভুলতে পারেন না। কবির মতে, বাংলার সৌন্দর্য এবং সংস্কৃতি তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সৌন্দর্য তা করতে পারেনি। কবিতাটি আমাদের মনে স্বদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের অনুভূতি জাগায়। কবি বাংলার মাটিতে ফিরে আসার জন্য উদগ্রীব, এবং এই আকাঙ্ক্ষা তার দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার নিদর্শন।
আবার আসিব ফিরে কবিতা ব্যাখ্যা
“আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে – এই বাংলায়”
কবি বলছেন, তিনি আবার ধানসিঁড়ির পাশে ফিরে আসতে চান। এটি বাংলা মাটির প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ ও ভালোবাসা প্রকাশ করে।
“হয়তো মানুষ নয় – হয়তো বা শঙখচিল শালিকের বেশে,”
কবি বলেন, হয়তো তিনি মানুষ হয়ে ফিরে আসবেন না, বরং শঙখচিল বা শালিক পাখির মতো হতে চান। এটি প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার একটি ইচ্ছা।
“হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিঁকের নবান্নের দেশে”
ভোরের কাক হয়ে কার্তিক মাসের নবান্নের উৎসবের সময়ে ফিরতে চান। এখানে বাংলার কৃষি উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
“কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।”
কুয়াশার মধ্যে ভেসে এসে কাঁঠালের ছায়ায় বসতে চান। এটি বাংলার শান্ত পরিবেশের অনুভূতি।
“হয়তো বা হাঁস হবো – কিশোরীর – ঘুঙুর রহিবে লাল পায়”
কবি হতে চান হাঁস, যেখানে কিশোরীর ঘুঙুরের সুরে মিলিত হবে। এটি জীবনের আনন্দের প্রতীক।
“সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।”
কলমী ফুলের গন্ধভরা জলে ভাসতে ভাসতে কাটাতে চান। এটি প্রকৃতির সৌন্দর্য ও প্রশান্তির অনুভূতি।
“আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে”
কবি বাংলার নদী, মাঠ ও ক্ষেতকে ভালোবাসেন। তিনি আবার ফিরে এসে এই প্রকৃতির মাঝে থাকতে চান।
“জলঙ্গীর ঢেউ এ ভেজা বাংলারি সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।”
জলঙ্গীর ঢেউয়ের সঙ্গে ভেজা সবুজ বাংলার ডাঙায় এসে শান্তির অনুভূতি নিতে চান।
“হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।”
কবি সুন্দর সন্ধ্যার বাতাসে কিছু দেখার আশা প্রকাশ করেন। এটি রোমান্টিক অনুভূতির প্রতীক।
“হয়তো শুনিবে এক লক্ষীপেঁচা ডাকিতেছে শিমুলের ডালে।”
লক্ষীপেঁচার ডাক শোনার কথা বলেন। এটি রাত্রির নিস্তব্ধতা ও বাংলার প্রাণিজগতের একটি চিত্র।
“হয়তো খৈয়ের ধান সরাতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।”
শিশুদের খৈয়ের ধান সরানোর দৃশ্য উল্লেখ করে কবি বাংলার গ্রামীণ জীবনের সাদাসিধা আনন্দ প্রকাশ করেন।
“রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে”
রূপসার জলে একটি কিশোরের সাদা ছেঁড়া পাল নিয়ে আসার কথা বলেন। এটি নদীর সৌন্দর্য ও জীবনের সহজ আনন্দ।
“ডিঙ্গা বায় – রাঙ্গা মেঘে সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে,”
ডিঙ্গা নিয়ে সাঁতরানোর দৃশ্য কবির জীবনের অস্থিরতা ও প্রকৃতির শান্তি নির্দেশ করে।
“দেখিবে ধবল বক; আমারে পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।”
শেষ লাইনে কবি বলেন, ধবল বকের ভিড়ে তিনি ধীরে ধীরে মিলিত হতে চান। এটি প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার একটি সুন্দর অনুভূতি।
Related Posts
- সুখী মানুষ গল্পের প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ)
- বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার মূলভাব ও ব্যাখ্যা
- দুই বিঘা জমি কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৯ম শ্রেণির বাংলা
- বনলতা সেন কবিতার ব্যাখ্যা লাইন বাই লাইন
- বনলতা সেন কবিতার মূলভাব বা বিষয়বস্তু -জীবনানন্দ দাশ
- ছিন্নমুকুল কবিতার মূলভাব, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও বহুনির্বাচনি – ৭ম শ্রেণির বাংলা
- কত দিকে কত কারিগর মূলভাব, প্রশ্ন উত্তর ও বহুনির্বাচনি (MCQ) – ৭ম শ্রেণির বাংলা