তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পের মূলভাব হল আত্মসম্মান, নীতির প্রতি অবিচল থাকা এবং সমাজের নিয়ম-নীতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজের পথ নির্বাচন করা। জীবনে কখনো নিজের নীতি এবং আত্মসম্মানকে ছাড় দেয়া উচিত নয়। সমাজের প্রথা ও আদর্শের বাইরে গিয়ে যদি প্রয়োজন হয়, তবে নিজের পথে চলা উচিত। এই পোস্টে চন্দ্রনাথ গল্পের বিষয়বস্তু ও প্রশ্ন উত্তর লিখে দিলাম।
Table of Contents
চন্দ্রনাথ গল্পের বিষয়বস্তু
‘চন্দ্রনাথ’ গল্পটি চন্দ্রনাথ নামক এক কিশোরের জীবনযাত্রা ও তার আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে। গল্পের নায়ক, চন্দ্রনাথ, এক গাঁওয়ের শিক্ষার্থী, যে তার জীবনে অনেক সংগ্রাম ও দুঃখ-দুর্দশা সত্ত্বেও নিজের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখতে চায়। তার মধ্যে এক ধরণের বিশেষ গুণ রয়েছে—নিজের আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে সে কখনো কম্প্রোমাইজ করে না।
গল্পের শুরুতে, নায়ক তার পুরানো দিনগুলোকে স্মরণ করে, যেখানে সে এবং তার সহপাঠী হীরু একসাথে পড়াশোনা করত। চন্দ্রনাথের দাদা নিশানাথ তাকে নিয়মিত উপদেশ দিতেন। কিন্তু এক সময় চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ না নিয়ে পত্রে জানিয়ে দেয়, কারণ তার কাছে সেকেন্ড প্রাইজ গ্রহণ করা তার সম্মানের বিরুদ্ধে মনে হয়। তার এই সিদ্ধান্ত তার দাদাকে রাগান্বিত করে, কারণ চন্দ্রনাথের দাদা মনে করেন যে এই আচরণ এক ধরনের অগ্রহণযোগ্য অহংকার। তবে চন্দ্রনাথ তার নিজস্ব জীবনের নীতি ও মূল্যবোধের প্রতি অবিচল থাকে এবং একসময় তার দাদা এবং পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তার আত্মমর্যাদাবোধের জন্য তার এই সিদ্ধান্ত তাকে একাই থাকতে বাধ্য করে। গল্পে তার কঠোর অবস্থান এবং নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় মনোভাব দেখা যায়।
গল্পের শেষে, হীরু, যে তার বন্ধু এবং সহপাঠী, যখন একটি পুরস্কার পায় এবং তাকে চন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন চন্দ্রনাথ আবারও তার সিদ্ধান্তের প্রতি অবিচল থাকে। সে জানিয়ে দেয়, সে এসব পুরস্কারের প্রতি অদৃষ্টবাদী নয় এবং নিজের সম্মানকে সব কিছু থেকে বড় মনে করে।
চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর (কমবেশি ১৫টি শব্দে)
১। ‘চন্দ্রনাথের চোখে জল’ – চন্দ্রনাথের চোখে জল কেন এসেছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথের চোখে জল এসেছিল, কারণ ও বুঝতে পেরেছিল যে ওর যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। অনেক চেষ্টা আর পরিশ্রম সত্ত্বেও জীবনের কিছু ক্ষেত্রে ও অবহেলিত হয়েছিল।
২। ‘হীরু ভ্রু কুঁচকে বলল’ – হীরু কী বলেছিল?
উত্তর: হীরু ভ্রু কুঁচকে বলেছিল, “এত সহজে ভুলতে পারলি?” ওর কণ্ঠে একটা রাগ আর বিস্ময় মিশে ছিল, কারণ ও আশা করেছিল চন্দ্রনাথ সহজে পরিস্থিতি মেনে নেবে না।
৩। ‘স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো ফার্স্ট হলো’ – সে কীভাবে ফার্স্ট হয়েছিল?
উত্তর: স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো ফার্স্ট হয়েছিল পক্ষপাতিত্ব আর প্রভাব খাটিয়ে। এটা চন্দ্রনাথের মতো মেধাবী ছাত্রদের প্রতি বড় অন্যায় ছিল।
৪। ‘মাস্টারমশাই চন্দ্রনাথের মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন’ – চন্দ্রনাথের মনের অবস্থা কী ছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথের মন খুব ভারাক্রান্ত ছিল। ও নিজেকে অবহেলিত আর মূল্যহীন মনে করছিল। বঞ্চনার একটা অনুভূতি আর ক্ষোভ ওর মনে কাজ করছিল।
৫। ‘চন্দ্রনাথের কপালের চিহ্ন’ – এই চিহ্নটি কী নির্দেশ করে?
উত্তর: চন্দ্রনাথের কপালের চিহ্ন ওর কঠোর পরিশ্রম আর সংগ্রামের প্রতীক। এটা ওর জীবনের অভিজ্ঞতা আর লড়াইয়ের সাক্ষ্য বহন করছিল।
৬। ‘চন্দ্রনাথের দাদা বিরক্ত কণ্ঠে বললেন’ – তিনি কী বলেছিলেন?
উত্তর: চন্দ্রনাথের দাদা বিরক্ত কণ্ঠে বলেছিলেন, “সব কিছু নিয়ে এত ভাবিস কেন? নিজের কাজটা মন দিয়ে কর।”
৭। ‘বিশেষ প্রাইজ নিতে অস্বীকার’ – চন্দ্রনাথ কেন প্রাইজটা নিতে চায়নি?
উত্তর: চন্দ্রনাথ প্রাইজটা নিতে চায়নি, কারণ ও জানত এই প্রাইজটা প্রকৃত মেধার ভিত্তিতে দেওয়া হয়নি। এতে ওর আত্মসম্মানবোধে আঘাত লেগেছিল।
৮। ‘চিঠি খুলে হীরু অবাক হলো’ – চিঠিতে কী লেখা ছিল?
উত্তর: চিঠিতে লেখা ছিল, “তোমার চেষ্টার ফল খুব শিগগিরই পাবে।” এটা হীরুকে আশার আলো দেখিয়েছিল।
৯। ‘নরু চন্দ্রনাথের বাড়িতে গিয়ে’ – নরু চন্দ্রনাথের বাড়ি নিয়ে কী দেখেছিল?
উত্তর: নরু চন্দ্রনাথের বাড়ি গিয়ে দেখেছিল যে ও খুব সাধারণ জীবনযাপন করে। বাড়িতে কোনও বিলাসিতা ছিল না।
১০। ‘হেডমাস্টারমশাই নিজের ভুল স্বীকার করলেন’ – তিনি কী ভুল করেছিলেন?
উত্তর: হেডমাস্টারমশাই স্বীকার করেছিলেন যে তিনি মেধার চেয়ে প্রভাবশালীদের প্রাধান্য দিয়েছিলেন, যার ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হয়েছিল।
১১। ‘চন্দ্রনাথের দাদার রাগ’ – দাদা কেন চন্দ্রনাথের ওপর রাগ করেছিলেন?
উত্তর: চন্দ্রনাথের দাদা রাগ করেছিলেন, কারণ চন্দ্রনাথ নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে পরিবারের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছিল।
১২। ‘চন্দ্রনাথের মনে দৃঢ় সংকল্প’ – এই সংকল্পটা কী ছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ দৃঢ় সংকল্প করেছিল যে ও মেধা আর সততার মাধ্যমে জীবনে এগিয়ে যাবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়বে।
১৩। ‘হীরুর প্রস্তাব’ – হীরু কী প্রস্তাব দিয়েছিল?
উত্তর: হীরু প্রস্তাব দিয়েছিল যে তারা একসঙ্গে কিছু নতুন উদ্যোগ নেবে, যা তাদের জীবনের মানোন্নয়নে সাহায্য করবে।
১৪। ‘চন্দ্রনাথের অনুমান মিলে গেল’ – কোন বিষয়টি তার অনুমান অনুযায়ী ঘটেছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ অনুমান করেছিল যে স্কুলের সিদ্ধান্তে প্রভাবশালী লোকেরা জড়িত, আর সেটাই সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল।
১৫। ‘মাস্টারমশাই চন্দ্রনাথকে ডাকলেন’ – কেন ডাকলেন?
উত্তর: মাস্টারমশাই চন্দ্রনাথকে ডাকলেন ওকে সান্ত্বনা দিতে আর বোঝাতে যে পরিশ্রম আর সততা জীবনে একদিন ঠিক ফল দেবে।
১৬। ‘চন্দ্রনাথের রাগ যেন আগুন হয়ে জ্বলল’ – চন্দ্রনাথের রাগের কারণ কী ছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথের রাগের কারণ ছিল অন্যায়ভাবে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং তার মেধার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়া।
১৭। ‘দাদার মৃদু হাসি’ – দাদা কেন মৃদু হেসেছিলেন?
উত্তর: দাদা মৃদু হেসেছিলেন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে চন্দ্রনাথ এখনও বাস্তব জীবনের কঠিন সত্যগুলো পুরোপুরি বুঝতে পারেনি।
১৮। ‘চিঠির শেষ লাইন’ – চিঠির শেষ লাইনে কী লেখা ছিল?
উত্তর: চিঠির শেষ লাইনে লেখা ছিল, “সততার পথেই জীবনের সত্যিকারের সাফল্য পাওয়া যায়।”
১৯। ‘হীরু বলল, তুই দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাবে’ – হীরু কেন এমন বলল?
উত্তর: হীরু চন্দ্রনাথকে উৎসাহ দিতে আর ওর মনোবল বাড়ানোর জন্য এমন কথা বলেছিল।
২০। ‘স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী’ – এই অনুষ্ঠানে কী ঘটেছিল?
উত্তর: স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরণীতে চন্দ্রনাথের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে উপেক্ষা করে অন্য একজনকে পুরস্কৃত করা হয়।
২১। ‘চন্দ্রনাথের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল’ – সেই মুহূর্তে ও কী ভাবছিল?
উত্তর: সেই মুহূর্তে চন্দ্রনাথ ভাবছিল যে মেধা থাকলেও অন্যায় আর প্রভাবশালীদের কারণে সঠিক মূল্যায়ন হয় না।
২২। ‘হেডমাস্টারমশাই চন্দ্রনাথকে সান্ত্বনা দিলেন’ – কীভাবে সান্ত্বনা দিলেন?
উত্তর: হেডমাস্টারমশাই চন্দ্রনাথকে বলেছিলেন যে জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় সৎ থেকে এগিয়ে যেতে হবে।
২৩। ‘মেধা থাকলেও চন্দ্রনাথ বঞ্চিত হলো’ – কেন এমন ঘটল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ বঞ্চিত হলো কারণ পক্ষপাতিত্ব আর প্রভাবশালীদের চাপে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
২৪। ‘হীরু চন্দ্রনাথকে একটা উপহার দিল’ – কী উপহার দিল?
উত্তর: হীরু চন্দ্রনাথকে একটা বই উপহার দিল, যা জীবনের সমস্যা মোকাবিলায় ওকে প্রেরণা জোগাবে।
২৫। ‘চন্দ্রনাথের বাবার পরামর্শ’ – বাবা কী বলেছিলেন?
উত্তর: চন্দ্রনাথের বাবা বলেছিলেন যে অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করে নিজের যোগ্যতার ওপর ভরসা রাখতে হবে।
২৬। ‘একটা নতুন দিশা দেখলাম’ – চন্দ্রনাথ কী নতুন দিশা দেখেছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ নতুন দিশা দেখেছিল যেখানে ও অন্যায় আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
২৭। ‘চন্দ্রনাথের মা চুপ করে ছিলেন’ – কেন চুপ করে ছিলেন?
উত্তর: চন্দ্রনাথের মা চুপ করে ছিলেন কারণ তিনি ভেতরে ভেতরে ওর কষ্টটা অনুভব করছিলেন কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিলেন না।
২৮। ‘নতুন দায়িত্ব পেয়ে চন্দ্রনাথ খুশি’ – কী দায়িত্ব পেয়েছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর দায়িত্ব পেয়েছিল, যা ওর জন্য গর্বের ছিল।
২৯। ‘হীরু চন্দ্রনাথের পাশে দাঁড়াল’ – হীরু কীভাবে পাশে দাঁড়াল?
উত্তর: হীরু ওকে মানসিকভাবে সমর্থন দিল এবং বলল যে ও কখনো একা নয়।
৩০। ‘জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য…’ – চন্দ্রনাথ কী শিখেছিল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ শিখেছিল যে জীবনে সৎ আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থেকে সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
৩১। ‘চন্দ্রনাথের নতুন পথচলা’ – চন্দ্রনাথ কীভাবে তার জীবন শুরু করল?
উত্তর: চন্দ্রনাথ নিজের শক্তি আর মেধার ওপর ভরসা রেখে নতুন উদ্যমে জীবনের পথে এগিয়ে চলল।
৩২। ‘স্কুলের পুরস্কার বিতরণীর দিন’ – চন্দ্রনাথের জন্য এই দিনটা কেমন ছিল?
উত্তর: এই দিনটা চন্দ্রনাথের জন্য খুবই বেদনাদায়ক ছিল, কারণ ওর কঠোর পরিশ্রমের ফল ও পায়নি।
আরও পড়ুনঃ চন্দ্রনাথ গল্পের প্রশ্ন উত্তর mcq
Related Posts
- তিন পাহাড়ের কোলে প্রশ্ন উত্তর, বিষয়বস্তু ও MCQ – দশম শ্রেণি
- পথের দাবী প্রশ্ন উত্তর, বিষয়বস্তু ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন
- শাবলতলার মাঠ প্রশ্ন উত্তর, গল্পের বিষয়বস্তু ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন
- ভারতবাসীর আহার প্রশ্ন উত্তর, সারাংশ ও MCQ -দশম শ্রেণির সাহিত্য সঞ্চয়ন
- চন্দ্রনাথ গল্পের চন্দ্রনাথ চরিত্র আলোচনা করো